লিপস্টিকের ওপর কর! শুনে অবাক? ভাবুন তো, যে বস্তুটি সারা ইতিহাস জুড়ে নারী শক্তি, গর্ব আর প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে এসেছে, আজ সেটাকেও অর্থনীতির তালিকায় জায়গা করতে হলো। জ্বালানি থেকে সারের খরচের মাঝখানে, হঠাৎ লিপস্টিক হয়ে উঠল অর্থনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সোশ্যাল মিডিয়া যেন উষ্ণতার লহরায় ভাসছে—মেকআপ সামগ্রীর দাম বাড়বে বলেই, লিপস্টিক আজ হাসির, বিক্ষুব্ধ কণ্ঠস্বরের, মজার মিমের বিষয়। কিন্তু কি শুধু মজা? না, লিপস্টিক এর গল্প অনেক গভীর। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া থেকে ক্লিওপেট্রা, কুইন এলিজাবেথ থেকে আজকের দিনে, লিপস্টিক শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং সাহসের প্রকাশ। ২০শ শতকে ভোটাধিকার আন্দোলনে নারী যখন লিপস্টিক পরতেন, সেটি ছিল ‘আমি আছি, আমি দৃশ্যমান’ বলার সাহসী ঘোষণা। ‘ফায়ার অ্যান্ড আইস’ থেকে ‘ভিভা গ্ল্যাম’, লিপস্টিক কেবল সৌন্দর্যের টুল ছিল না—অনেকবার সে সংগ্রামের অস্ত্র, দান, প্রতিবাদের মুখরো চিহ্নও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সাহসী মহিলারা লাল, বেরি, গোলাপি লিপস্টিক পরতেন ‘আমরা ভয় পাই না, আমরা অদম্য’ বলার জন্য। আর আজ? দাম বাড়ছে। আর্থিক সংকটের নাম দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘এ তো সামান্যই’। কিন্তু লিপস্টিকের অর্থ সামান্য নয়। এটি মনোযোগ, পরিচয়, আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। দাম বাড়লেও আমরা থেমে থাকব না। ডুপস খুঁজে পাবো, ঘরে বানিয়ে নেবো, সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেট চালু করব—যেটা অবশ্যই আছে! টিকটকে চলছে বিটরুট লিপস্টিক বানানোর ট্রেন্ড। প্রতিবাদের আর্ট। বিশ্বের নানা প্রান্তে লিপস্টিকের অর্থ বদলায়, কিন্তু প্রতিটি সংস্কৃতিতে সেটি রয়ে গেছে এক অনুভবের প্রতীক—অভিব্যক্তি, প্রতিরোধ, আত্মসম্মান। তাই বলি, দাম বাড়ুক। কারণ, প্রতিটি রঙ—চেহারার এক এক্সপ্রেশন, এক এক ধরনের বেঁচে থাকার ঘোষণা। আর বেঁচে থাকা তো সবসময়ই ফ্যাশনে। লিপস্টিক কর দিতে পারে, কিন্তু আমাদের দৃশ্যমানতা কখনো মুল্যায়িত করা যাবে না।