🧾 সংবিধান ও অধিকার: নাগরিক অধিকার থাকলেও বাস্তব প্রয়োগ কোথায়? বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে থাকা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক (ESC) অধিকারগুলো এখনো পর্যন্ত অপ্রয়োগযোগ্য—মানে, আদালতে এগুলো নিয়ে মামলা করা যায় না বা রাষ্ট্র বাধ্য নয় সেগুলো বাস্তবায়নে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই অধিকারগুলো বাস্তবে তো মানুষের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি—তাহলে কেন এগুলো শুধু "দিকনির্দেশনা" হিসেবেই থেকে যাবে? 🇧🇩⚖️ 📜 ইতিহাসে ফিরে দেখা: কোথা থেকে এল এই মডেল? ১৯৩৭ সালে আয়ারল্যান্ড প্রথম তাদের সংবিধানে ESC অধিকারকে অপ্রয়োগযোগ্য নির্দেশনা হিসেবে যুক্ত করে। ভারত ও বাংলাদেশ একই মডেল অনুসরণ করে। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানও এই অধিকারগুলোকে দ্বিতীয় ভাগে যুক্ত করে, কিন্তু ধারা ৮(২) অনুযায়ী এগুলোর আইনি বলবৎতা নেই। তবে বাস্তবে, ভারতের মতো বাংলাদেশেও ‘জীবনের অধিকার’ (right to life)-এর ব্যাখ্যা এতটাই প্রসারিত করা হয়েছে যে, এর ভেতর দিয়েই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, বাসস্থান-এর মতো ESC অধিকারগুলো পরোক্ষভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু লেখকের মতে, এটি এক ধরনের সাংবিধানিক প্রতারণা—যা মূল আইনের স্পষ্টতা ও স্বচ্ছতাকে ক্ষুণ্ন করে। 🚫📘 ⚖️ বিচারব্যবস্থা ও এর পরিধি সাধারণভাবে ESC অধিকার প্রয়োগ মানে রাষ্ট্রকে কোনো নির্দিষ্ট ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা, যেমন: ভূমি হারানো মানুষকে পুনর্বাসন করা দরিদ্রদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা তবে লেখক মনে করেন, আদালতের ভূমিকা হওয়া উচিত ‘বিচারিক পর্যালোচনা’ (judicial scrutiny)—যেখানে তারা পরিস্থিতি বিবেচনা করে যুক্তিসঙ্গততা যাচাই করবে, না যে আদালত সরাসরি বাজেট নির্ধারণ করে কার্যনির্বাহী শাখাকে নির্দেশ দেবে। 🌍 দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞতা: একটি উদাহরণ দক্ষিণ আফ্রিকা সংবিধান (১৯৯৮)-এ CP এবং ESC—দু’ধরনের অধিকারই প্রয়োগযোগ্য। 🩺 Soobramoney v Minister of Health (1997): হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসার দাবিতে আবেদন খারিজ হয় বাজেট সংকটের কারণে। 💉 Minister of Health v Treatment Action Campaign (2002): সরকারকে HIV প্রতিরোধী ওষুধ বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই দুইটি রায় দেখায় কিভাবে বিচার বিভাগ তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে, কিন্তু সংসদের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ না করে। 🇧🇩 বাংলাদেশ প্রসঙ্গে পুনরালোচনা বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতারা তৎকালীন দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে ESC অধিকারগুলোকে অপ্রয়োগযোগ্য রাখেন। তবে: এখন অর্থনীতি অনেক বেশি শক্তিশালী ২০১৩ সালে ICESCR-এর ঐচ্ছিক প্রোটোকল গ্রহণে আন্তর্জাতিক নীতিগত দ্বৈততা দূর হয়েছে তাজউদ্দিন আহমেদ নিজেই বলেছিলেন ভবিষ্যৎ সংসদ চাইলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ✅ এখন প্রয়োজন কী? সংবিধানের ধারা ৮(২)-এর সংশোধন করে দ্বিতীয় ভাগের অধিকারগুলোকে প্রয়োগযোগ্য করা ‘বিচারিক প্রয়োগ’ অর্থে ‘বিচারিক পর্যালোচনা’ বোঝানো—সরকারের কাজ না নিয়ে আদালতের কাজ আদালত করবে ESC অধিকারগুলোর প্রয়োগ ধাপে ধাপে এবং রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা অনুযায়ী করা 📌 উপসংহার নাগরিকদের স্বাস্থ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, খাদ্য, নিরাপদ পানি—এসব কোনো বিলাসিতা নয়, বরং জীবনের অধিকারকেই অর্থবহ করে তোলে। আর এসবকে যদি শুধু 'নির্দেশনা' হিসেবে রেখে বাস্তব প্রয়োগ না করা হয়, তবে এটি গণতন্ত্রের নৈতিক ভিত্তিকেই দুর্বল করে। 📢 তাই সময় এসেছে সংবিধানকে নতুন বাস্তবতায় অভিযোজিত করার, যেখানে শুধু ভোট নয়, জীবনের গুণগত মানও রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃত হবে। ✍️ লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ল ডেস্কের নিয়মিত লেখক।