🌱ইকোসাইডের প্রস্তাবিত সংজ্ঞা “অবৈধ বা অবিবেচিত এমন কর্মকাণ্ড, যা কার্যকারণ জেনেও করা হয় এবং যার ফলে পরিবেশে গুরুতর, বিস্তৃত বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির উচ্চ সম্ভাবনা থাকে”—এই সংজ্ঞায় ইকোসাইডকে দেখা হচ্ছে কেবল পরিবেশের জন্যই নয়, মানবজাতির জন্যও হুমকি হিসেবে। Stop Ecocide International নামের একটি সংস্থা দাবি করছে, যেকোনো রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রসমষ্টি রোম সংবিধানে এই অপরাধ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখতে পারে। ২০১৯ সালে ভানুয়াটু জাতিসংঘে এই প্রস্তাব তোলে এবং বাংলাদেশে ২০২১ সালে জাতীয় সংসদের পরিবেশ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আইন প্রণয়নের সুপারিশ করে। 🇧🇩বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিবেশ আইন পর্যবেক্ষণ বর্তমান পরিবেশ আইনগুলো ইকোসাইডের মতো মারাত্মক অপরাধ মোকাবিলায় কতটা সক্ষম? 📜বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ পাহাড় কাটা, জলাভূমি ভরাটের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, “জাতীয় স্বার্থে” ব্যতিক্রমের সুযোগ রাখায় পরিবেশ ধ্বংস অনেক সময় আইনি কাঠামোর মধ্যেই বৈধ হয়ে যায়। ক্ষতিপূরণের ভিত্তিতে ‘দূষণকারী অর্থ প্রদান’ নীতি চালু থাকলেও শাস্তির মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম (সর্বোচ্চ ১০ বছর জেল এবং/অথবা জরিমানা)। ⚖️পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০ কেবল বিচার ব্যবস্থার কাঠামো নির্ধারণ করে, নতুন অপরাধ সংযুক্ত করে না। 🐾বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, ২০১২ ও জৈববৈচিত্র্য আইন, ২০১৭ বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কিছু ব্যবস্থা থাকলেও, ইকোসাইডের মতো বৃহৎ ধ্বংসযজ্ঞের জন্য যথেষ্ট নয়। 🌊সমুদ্র পরিবেশ আইন এখনও হয়নি! ২০০৪ সালে খসড়া হলেও Marine Environment Conservation Act এখনও পাস হয়নি। ‍বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩ ও মৎস্য আইন ১৯৫০ এবং ২০২০ থাকলেও সাগর বা জলজ পরিবেশ সুরক্ষায় দুর্বল। ❌এত আইন থাকা সত্ত্বেও কী ঘাটতি রয়ে গেছে? বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির অভাব। জাতীয় স্বার্থ বা অপরিহার্য প্রকল্পের আড়ালে আইনকে পাশ কাটিয়ে প্রকৃতি ধ্বংস করার সুযোগ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ইকোসাইড অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়া সত্ত্বেও, স্থানীয় আইনে সেই গুরুত্ব নেই। ✅ তাহলে এখনই প্রয়োজন... 🔹 আন্তর্জাতিকভাবে ‘ইকোসাইড’কে পঞ্চম আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। 🔹 বাংলাদেশে আলাদা ‘ইকোসাইড আইন’ প্রণয়ন, যেখানে থাকবে: পরিবেশ ধ্বংসকে অপরাধ হিসেবে স্পষ্ট সংজ্ঞায়িতকরণ বৃহৎ ও পরিকল্পিত প্রকৃতিধ্বংসকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পরিবেশ আদালতের ক্ষমতা বৃদ্ধি ‍অস্পষ্ট ব্যতিক্রম ধারাগুলোর বাতিলকরণ 🌎 পরিবেশ রক্ষা মানেই ভবিষ্যৎ রক্ষা ইকোসাইড কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। এটি মানবতার বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসা বিপর্যয়। জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক সম্পদের ধ্বংস—সবই এর উপসর্গ। তাই শুধু পরিবেশপ্রেমিক বা বিশেষজ্ঞ নয়, সবার সম্মিলিত চাপে দরকার একটি স্বাধীন ও কার্যকর ‘ইকোসাইড আইন’। 🛑🌱⚖️ ✍️ লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ল ডেস্কের নিয়মিত লেখক।