বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনগুলো বারবার রূপ পাল্টালেও, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—নাম বদলালেই কি মানুষের অধিকার রক্ষা হয়? 🇧🇩💻 ২০১৮ সালের বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (DSA) বাতিল করে সাইবার নিরাপত্তা আইন (CSA) আসে ২০২৩ সালে, এরপর ২০২৫ সালের মে মাসে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ (CPO) চালু করা হয়। সরকার প্রতিটি পদক্ষেপকে স্বাধীন মত প্রকাশ ও ডিজিটাল অধিকার রক্ষায় 'উন্নত সংস্করণ' হিসেবে দাবি করলেও, বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীদের মতে—এগুলো ছিল মূলত নাম বদলের কৌশল, ভেতরের কাঠামোতে বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ⚖️🗞️ ⚠️ সংবিধানসম্মত না? নাকি আধুনিকতার ছদ্মবেশ? CSA চালুর সময় ধারা ৪২(১)(ডি)-তে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের সুযোগ ছিল, যা সাংবাদিক, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ও মতপ্রকাশকারীদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়। ধারা ২৯-এ ছিল মানহানিকেও অপরাধ, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডে অগ্রহণযোগ্য। ২০২৫ সালের CPO কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে যেমন: ‍🎯 ৯টি বিতর্কিত ধারা বাতিল ‍👨‍⚖️ আদালতের অনুমতি ছাড়া কনটেন্ট মোছার উপর নিষেধাজ্ঞা ‍📜 মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান ও জাতীয় নেতাদের সমালোচনার সুযোগ তৈরি 🤖 কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল অধিকার CPO প্রথমবারের মতো AI সংক্রান্ত সাইবার অপরাধ, ডিপফেইক, মিথ্যা তথ্য, ও স্বয়ংক্রিয় হ্যাকিং নেটওয়ার্ক নিয়েও কথা বলেছে। নারীদের ও শিশুদের অনলাইনে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর সাজা প্রস্তাব করেছে, এবং ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। 🌐👩‍💻 ❗ এখনও কোথায় সমস্যা? ‍📌 ধারা ৩৫(১)(ডি)-তে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে আবারও পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার সম্ভব, যদিও এবার আদালতের পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে। ‍📌 মানহানিকে এখনও অপরাধ হিসেবে রাখা হয়েছে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যেতে পারে। ‍📌 একটি অস্থায়ী সরকারের হাতে এ অধ্যাদেশ পাস হওয়ায় গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা ও জনঅংশগ্রহণ অনুপস্থিত ছিল। 🧠 প্রয়োজন কাঠামোগত সংস্কার, শুধু নাম নয় সত্যিকার অর্থে সাইবার আইনে প্রকৃত সংস্কার আনতে হলে চাই: ‍✅ সাইবার অপরাধের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ‍✅ বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা ‍✅ গঠনমূলক সাংবাদিকতা ও হুইসেলব্লোয়িংয়ের সুরক্ষা ‍✅ ঘৃণামূলক বক্তব্য নিয়ন্ত্রণে গাইডলাইনভিত্তিক আইন 📢 সর্বোপরি, চাই সকল পক্ষের (আইনবিদ, প্রযুক্তিবিদ, নাগরিক সমাজ) সম্পৃক্ততা। তাহলেই সম্ভব হবে এমন একটি আইন তৈরি করা, যা একদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার মূল্যবোধকে অক্ষুন্ন রাখবে। ✍️ লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ল ডেস্ক-এর নিয়মিত লেখক।